Breaking

Sunday, February 19, 2017

কোলেস্টেরল আধিক্যের প্রভাব ও প্রতিরোধ

কোলেস্টেরল আধিক্যের প্রভাব ও প্রতিরোধ
কোলেস্টেরল এক ধরনের চর্বি বা ফ্যাট জাতীয় পদার্থ যা রক্তে পাওয়া যায়। শরীরের স্বাভাবিক কাজ ও সু-স্বাস্থ্যের জন্য এর গুরুত্ত অপরিসীম। কোলেস্টেরল আমাদের শরীরে মূলত দুটি উৎস থেকে আসে, একটি খাবারের মাধ্যমে ও আরেকটি শরীরের ভিতরে লিভার তৈরি করে এবং আমরা যখন চর্বি জাতীয় খাবার বেশি খাই তখন লিভারের কোলেস্টেরল তৈরির হার বেড়ে যায়। সবশেষে এই কোলেস্টেরল রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে আমাদের দেহের সমস্ত রক্তনালিতে ছড়িয়ে পড়ে। অনেকসময় রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমান বেড়ে যায় যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। গবেষনায় প্রমানিত একজন স্বাভাবিক মানুষের চাইতে কোলেস্টেরল অধিকযুক্ত মানুষের হার্ট অ্যাটাক, ব্রেইন স্ট্রোক ও অন্যান্য স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেক বেশি। তাই স্বাভাবিক এর চেয়ে এর পরিমান যত বেশি থাকবে ততই এই ঝুঁকি বাড়তে থাকবে।
কোলেস্টেরল কী কাজ করে ?
আমাদের শরীর প্রতিনিয়ত কোলেস্টেরল তৈরি করে যাচ্ছে এবং এটি শরীরের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন কাজে সাহায্য করে। যেমন-
১। হরমোন যেমন মহিলা ও পুরুষের সেক্স হরমোন, কোর্টিসন হরমোন ইত্যাদি তৈরিতে।
২। ভিটামিন ডি তৈরিত, যা পরিপাক নালী থেকে ক্যলসিয়াম শোষণ, হাড় গঠন ও আমাদের মজবুত রাখতে সাহায্য করে।
৩। পিত্তরস তৈরিতে যা খাদ্য পরিপাক ও চর্বিতে দ্রবনীয় ভিটামিনগুলোর পরিপাকে সাহায্য করে।
৪। আমাদের দেহের কোষের দেয়ালে থাকে যা কোষের স্বাভাবিক কাজ চালিয়ে যেতে অত্যন্ত গুরুত্তপুর্ন।
কোলেস্টেরল কয় ধরনের হয়?
সাধারণত দুই ধরনের কোলেস্টেরল আছে। তাদের মধ্যে একটি ভাল কোলেস্টেরল যার পরিমান কমে গেলে ও আরেকটি খারাপ কোলেস্টেরল যার পরিমান অধিক থাকলে হার্ট অ্যাটাক, ব্রেইন স্ট্রোক ও অন্যান্য সমস্যার ঝুঁকি বেড়ে যায়। যেমন-
১। লো ডেনসিটি লাইপো প্রোটিন (LDL) বা খারাপ কোলেস্টেরল।
২। হাই ডেনসিটি লাইপো প্রোটিন (HDL) বা ভাল কোলেস্টেরল।
LDL কে খারাপ কোলেস্টেরল বলা হয় কেন?
এটি সাধারণত কোষগুলোতে প্রয়োজনীয় কোলেস্টেরল পৌছায় দেয় কিন্ত রক্তে এর পরিমান বেড়ে গেলে ধমনির দেয়ালে ক্ষতিকর প্লাক তৈরিতে সাহায্য করে যার ফলে অনেক সময় রক্তনালী ব্লক করে রক্ত সঞ্চালনে ব্যঘাত ঘটায় যার ফলে হার্ট অ্যাটাক, ব্রেইন স্ট্রোকের মত সমস্যা হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। তাই এর পরিমান বেশি থাকা স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ এবং তাই রক্তে সব সময় সঠিক লেভেলে থাকা গুরুত্তপুর্ন। রক্তে এলডিএলের স্বাভাবিক লেভেল হলো কমপক্ষে ১০০ মিলিগ্রাম পার ডিএল।
HDL কে ভাল কোলেস্টেরল বলা হয় কেন?
এইচডিএল ধমনির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় খারাপ কোলেস্টেরলকে সরিয়ে দিতে সাহায্য করে ও লিভারে পাঠিয়ে দেয় ও পরবর্তীতে তা শরীর থেকে বের করে দেয়। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। প্রক্ষান্তরে এর পরিমান কমে গেলে হৃদরোগের ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এইচডিএলের স্বাভাবিক লেভেল ৪০ থেকে ৬০ বা তার বেশি মিলিগ্রাম পার ডিএল।
কি কারণে কোলেস্টেরলের পরিমান বাড়তে পারে?
অধিক পরিমান স্যাচুরেটেড ও ট্রান্স ফ্যাট যুক্ত খাবার গ্রহন।
অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার গ্রহনও পরোক্ষ ভাবে বাড়ায়।
অধিক ওজন থাকা যা আমাদের ভাল কোলেস্টেরলের পরিমান কমিয়ে দেয়।
যথেষ্ট শারীরিক পরিশ্রম না করা।
অধিক পরিমান মদ্য সেবন।
ধূমপান করা। সিগারেটে এক ধরনের পদার্থ থাকে “এক্রোলিন” যা ভাল কোলেস্টেরলের কাজ করা ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
উচ্চরক্ত চাপ ও ডায়বেটিস থাকলে।
কিছু রোগ যেমন লিভারের ও কিডনি রোগ থাকলে ও থাইরয়েড হরমোন কম তৈরি হলে।
এছাড়া পরিবারে অধিক কোলেস্টেরলের ইতিহাস থাকলে সন্তানের বেশি থাকার সম্ভাবনা থাকে।
কখন কোলেস্টেরল লেভেল টেস্ট করতে দেন ডাক্তার?
হার্টের ধমনীতে ব্লক থাকলে, স্ট্রোকে ও মিনি স্ট্রোক হয়ে থাকলেও এছাড়া সম্ভাবনা থাকলে।
পরিবারে কারো হৃদরোগ থাকলে।
ওজন বেশি থাকলে।
উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়বেটিস থাকলে অথবা অন্য যেকোণ সমস্যা যেখান কোলেস্টেরলের পরিমান বেড়ে যায়।
এছাড়া কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ খাওয়ার পর সঠিক মাত্রা পরিমাপ করতে করতে দেয়া হয়।
কোলেস্টেরল বেশি থাকলে প্রতিরোধ করার উপায়?
কোলেস্টেরল কমাতে প্রয়োজন স্বাস্থ্যকর কম স্যাচুরেটেড ফ্যাটযুক্ত সুষম খাদ্য গ্রহণ, নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম ও ধূমপান পরিহার করা।
স্যাচুরেটেড ও ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাবার কম খেতে হবে। স্যাচুরেটেড ফ্যাট পাওয়া যায় প্রানিজ খাবার যেমন- যেমন লাল মাংস, মাখন, ঘি, ডিমের কুসুম, কেক, বিস্কিট, পাম অয়েল ও নারিকেলের তেল ও ট্রান্স ফ্যাট থাকে ভাজা পড়া খাবার ও প্রক্রিয়াজাত খাবারে।
জলপাইয়ের তেল এবং জলপাইয়ের তৈরি খাদ্য খাওয়া যাবে। অলিভ অয়েল বা জলপাইয়ের তেলে রয়েছে মনো-আনসেচুরেটেড ফ্যাটি এসিড ও ভিটামিন ই।
প্রচুর পরিমান শাকসব্জি খেতে হবে।
অ্যান্টি অক্সিডেন্ট-সম্বৃদ্ধ ফল ও সবজি যেমন কমলা, গ্রেপফল, লেবু, ক্র্যানবেরি, স্ট্রবেরি, ব্ল্যাকবেরি, সবুজ বা চায়নিজ পাতাকপি, ব্রকোলি ইত্যাদি। এছাড়া ভিটামিন সি-এর আরেকটি ভালো উৎস হচ্ছে মরিচ।
অপ্রক্রিয়াজাত দানাদার খাবার খেতে হবে। সব ধরনের অপ্রক্রিয়াজাত দানাজাতীয় খাবারে ভিটামিন বি ও মিনারেলস রয়েছে।
মাছ
ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড-জাতীয় খাদ্য ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড-জাতীয় খাদ্য।
সপ্তাহে পাঁচ দিন অন্তত ৩০-৪৫ মিনিট শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে।
ধূমপান পরিহার করতে হবে একদম।
কখন কোলেস্টেরল কমানোর জন্য ওষুধ খাওয়া লাগতে পারে?
যদি আগে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকে হয়ে থাকলে।
হার্টের রকনালিতে ব্লক থাকলে
ডায়াবিটিস থাকলে।
পায়ের রক্তনালিতে জমাট বাধলে।
থাইরয়েড এর সমস্যায়।
এছাড়া যেকোন সমস্যা যেখানে স্বাভাবিক জীবনধারায় পরিবর্তন এনে পরিমান কমানো যাচ্ছে না বা স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেশি থেকে যাচ্ছে।

source:

No comments:

Post a Comment

আপনার মতামতের জন্য ধন্যবাদ /Thanks for your feedback